02 May 2024, 08:05 am

‘ছিঃ মানব চিড়িয়াখানা’; ইউরোপে বর্ণবাদের ভয়ঙ্কর এক অতীত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জার্মানির হামবুর্গ, পর্তুগালের লিসবন এবং বেলজিয়ামের ব্রাসেলস- ইউরোপের বিখ্যাত এই তিন শহরে খুব ঘটা করে আয়োজন করা হতো অপুষ্টিতে কাহিল অশ্বেতাঙ্গ মানুষদের প্রদর্শনী। কলঙ্কের এই ইতিহাস অবশ্য ইউরোপের সবাই প্রায় ভুলতে বসেছেন। মানুষের এমন বর্ণবাদী ‘এথনোগ্রাফিক এক্সিবিশন’-এর কথা জার্মানি, পর্তুগাল ও বেলজিয়ামের বেশির ভাগ মানুষ জানেন না এবং যারা জানেন, তারা তা স্বীকার করেন না।

ইউরোপের তখনকার শাসকরা মানবতার প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করা এসব প্রদর্শনীর আয়োজন করতেন মূলত ‘ইউরোপীয় সভ্যতার’ আধিপত্য জাহির করতে। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৫ শতকের গোড়ার দিকে শুরু হয়ে এই প্রবণতা চলেছে  উনিশ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত।

জার্মানিতে উপনিবেশ থেকে মানুষ অপহরণ করে এনে চিড়িয়াখানায় ঢুকিয়ে রাখাকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করেছিলেন ব্যবসায়ী কার্ল হাগেনবেক। তার কোম্পানি জার্মানির হামবুর্গ শহরের চিড়িয়াখানায় প্রথম মানুষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে ১৮৭৪ সালে। সেই থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত হামবুর্গ চিড়িয়াখানায় ‘মানুষ প্রদর্শনী’ ছিল দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ এক আকর্ষণ। কার্ল হাগেনবেক আর বেঁচে নেই। তবে হামবুর্গ চিড়িয়াখানা এখনো আছে। এখনো চিড়িয়াখানাটির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে কার্ল হাগেনবেক-এর হাগেনবেক কোম্পানি।

মানুষ ‘অপহরণ’ করে এনে হামবুর্গ চিড়িয়াখানায় ঢুকিয়ে রাখাকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করেছিলেন ব্যবসায়ী কার্ল হাগেনবেকমানুষ ‘অপহরণ’ করে এনে হামবুর্গ চিড়িয়াখানায় ঢুকিয়ে রাখাকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করেছিলেন ব্যবসায়ী কার্ল হাগেনবেক

সম্প্রতি জার্মানির সংবাদমাধ্যম এনডিআর-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইউরোপে ‘মানব চিড়িয়াখানা’র অতীত নিয়ে কথা বলেছেন ইতিহাসবিদ ইয়্যুর্গেন সিমার। সেখানে তিনি বলেছেন, হামবুর্গ চিড়িয়াখানার মতো ইউরোপের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় পরিকল্পনা করেই মানুষ রাখা হতো। মানবতার প্রতি এমন অপমানজনক অতীতের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইয়্যুর্গেন সিমার। তবে ক্লাউস হাবেরবেক-এর সন্তান কার্ল মনে করেন,   সে আমলের শিল্প এমনই ছিল এবং শিল্পের দাবি পূরণ করতেই বাঘ, ভালুকের মতো মানুষও দেখানো হতো চিড়িয়াখানায়।

পর্তুগালে মানুষ যখন চিড়িয়া’… : পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ছিল চিড়িয়াখানায় মানুষ প্রদর্শনীর রমরমা। তখন পর্তুগাল শাসন করছিলেন স্বৈরাচারী শাসক আন্তনিও ডি অলিভিয়েরা সালাসার। তার উদ্যোগে ১৯৪০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সিবিশনে খাঁচায় বন্দি মানুষ দেখেছেন কয়েক হাজার মানুষ।

ব্রাসেলসের কালো অধ্যায় : বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ১৯৫৮-র ওয়ার্ল্ড ফেয়ার, অর্থ্যাৎ বিশ্ব মেলার মতো বড় আয়োজনেও পশু-পাখির মতো প্রদর্শিত হয়েছে মানুষ।

ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্ক অ্যাগেইন্স্ট রেসিজম (ইএনএআর)-এর প্রত্নতাত্ত্বিক ও অ্যাক্টিভিস্ট ব্রাসেলসের ওই কালো আধ্যায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন । তার মতে, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের ব্যাপক প্রসার এবং মানুষের মধ্যে পর্যটনে আগ্রহ রাতারাতি খুব বেড়ে যাওয়ার কারণে ইউরোপের দেশগুলো ‘মানব চিড়িয়াখানা‘র ধারণা থেকে সরে এসেছে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2876
  • Total Visits: 685179
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1124

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ ইং
  • ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৮:০৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018